সর্বশেষ

চকবাজার এলাকায় ফের আগুনের বিভীষিকা

/ শরীফের ছুটি আর লাগবে না /

প্রকাশ :


আবার পুরান ঢাকায় আগুন / চকবাজারের দেবীঘাটে চারতলা ভবনে সোমবার এ আগুন লাগে /

২৪খবরবিডি: 'মাসখানেক আগে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার বরিশাল হোটেলে কাজ শুরু করেছিল ১৫ বছরের মো. শরীফ। গতকাল সোমবার সকালে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য দু'দিন ছুটি চেয়েছিল হোটেলের বাবুর্চি ও তার দূর সম্পর্কের নানা আবুল কাশেমের কাছে।'

তবে সোমবার নয়, মঙ্গলবার থেকে ছুটি নিতে বলেছিলেন নানা। এখন আর কারও কাছ থেকেই ছুটির দরকার নেই শরীফের। সে চলে গেছে 'চিরছুটি'তে। গতকাল ওই হোটেলের দোতলায় ঘুমিয়ে থাকার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আরও পাঁচজনের সঙ্গে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে এই কিশোরের দেহ। শরীফের দূর সম্পর্কের নানা আবুল কাশেম ২৪খবরবিডিকে জানান, শরীফের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তিতচর গ্রামে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের পর থেকে তার বাবা দিনমজুর মিজানুর রহমান শয্যাশায়ী। এতদিন তাও টেনেটুনে চলছিল তাদের সংসার; এই ধাক্কায় সেই পথও বন্ধ হয়ে যায়। একেবারে না খেয়ে থাকার পরিস্থিতির মুখোমুখি হন পরিবারের সদস্যরা।


-কাশেম জানান, ঈদুল আজহার আগে মিজানুরের মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। তখন থেকে সংসার আর চলে না। তখন সবাই তাকে অনুরোধ করলেন যেন শরীফকে কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে সে যদি পরিবারকে চালের টাকাটাও দিতে পারে, তারা আধপেটা হলেও খেতে পাবেন। অনুরোধ ফেলতে না পেরে শরীফকে তিনি চকবাজারের এই হোটেলে নিয়ে আসেন।

চকবাজার  এলাকায়  ফের  আগুনের  বিভীষিকা

তিনি নিজেও অনেকদিন ধরে এখানে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গ্রাম সম্পর্কের এই নাতিকেও মাসখানেক আগে কর্মচারী হিসেবে কাজ দিয়েছিলেন। তার মজুরি ছিল প্রতিদিন ২০০ টাকা। সে এখানে ছোটখাটো কাজ করত, খাবার খেতে আসা লোকজনকে পানি দিত, টেবিল পরিস্কার করত। ভালোই কাজ করছিল ছেলেটা, এর মধ্যেই মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটল।
 

আবুল কাশেম জানান, দিন-রাতের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই হোটেলে কাজ হতো। রোববার রাতেও দায়িত্ব পালন করেছে শরিফ। এরপর সে ছুটি চায়। ছুটি না পাওয়ায় একটু মন খারাপ করে হোটেলের দোতলায় শ্রমিকদের ঘুমানোর জায়গায় ঘুমাতে যায়। এরপর ঘটে এই অগ্নিকাণ্ড। সে আর হোটেল থেকে বের হতে পারেনি। তিনি বলেন, আমি সকাল ৮টার দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে সাভারে বেড়াতে যাই। সেখান থেকেই আগুন লাগার খবর পাই। তখনই শরীফকে কল করে দেখি মোবাইল ফোন বন্ধ। আমি দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসি। এখানে এসে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। মর্মান্তিক এই মৃত্যুর খবর পেয়ে শরীফের আত্মীয়-স্বজনরা ঢাকায় ছুটে আসেন। তার খালা নাসরীন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) মর্গের সামনে আহাজারি করছিলেন। তিনি বারবার বলছিলেন, আল্লাহ কেন তুমি এই নিষ্পাপ বাচ্চাটিকে কেড়ে নিলে?


'মৃতের মামা আরিফ জানান, শরীফের বাবা তাকেও অনেকদিন বলেছিলেন, ভাগ্নেকে একটা কাজে দেওয়ার জন্য। তিনি দিতে না পারলেও ভাগ্নের একটা কাজ জোটায় খুশিই হয়েছিলেন। এর পরিণতি যে এমন হবে, তা কেউ ভাবতে পারেননি। এখন দরিদ্র পরিবারটির কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত সবাই।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত